কলার উৎপাদন প্রযুক্তি
মাটি
পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থাসম্পন্ন উঁচু জমি কলা চাষের জন্য উপযুক্ত। উর্বর দোআঁশ মাটি কলা চাষের জন্য উত্তম।
জমি তৈরি ও গর্ত খনন
জমি ভালভাবে গভীর করে চাষ করতে হয়। দুই মিটার দূরে দূরে৬০ *৬০ সেমি* ৬০ সেমি আকারের গর্ত খনন করতে হয়। চারা রোপণের মাসখানেক আগেই গর্ত খনন করতে হয়। গর্তে গোবর ও টিএসপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রাখতে হয়।
রোপণের সময়
কলার চারা বছরে ৩ মৌসুমে রোপণ করা যায়।
প্রথম রোপণঃ আশ্বিন-কার্তিক (মধ্য-সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-নভেম্বর)।
দ্বিতীয় রোপণঃ মাঘ-ফাল্গুন (মধ্য-জানুয়ারি থেকে মধ্য-মার্চ)।
তৃতীয় রোপণঃ চৈত্র-বৈশাখ (মধ্য-মার্চ থেকে মধ্য-মে)।
চারা রোপণ
রোপণের জন্য অসি তেউড় উত্তম। অসি তেউড়ের পাতা সরু, সূচালো এবং অনেকটা তলোয়ারের মত, গুড়ি বড় ও শক্তিশালী এবং কান্ড ক্রমশ গোড়া থেকে উপরের দিকে সরম্ন হয়। তিন মাস বয়স্ক সুস্থ তেউড় রোগমুক্ত বাগান থেকে সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত খাটো জাতের গাছের ৩৫-৪৫ সেমি ও লম্বা জাতের গাছের ৫০-৬০ সেমি দৈর্ঘৌর তেউর ব্যবহার করা হয়।
সারের পরিমাণ
সারের নাম |
সারের পরিমাণ/গর্ত |
গোবর/আবর্জনা সার |
১৫-২০ কেজি |
টিএসপি |
২৫০-৪০০ গ্রাম |
এমপি |
২৫০-৩০০ গ্রাম |
ইউরিয়া |
৫০০-৬৫০ গ্রাম |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সারের ৫০% গোবর জমি তৈরির সময় এবং বাকি ৫০% গর্তে দিতে হয়। এ সময় অর্ধেক টিএসপি গর্তে প্রয়োগ করা হয়। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ২৫% ইউরিয়া, ৫০% এমপি ও বাকি টিএসপি জমিতে ছিটিয়ে ভালভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই আড়াই মাস পর গাছপ্রতি বাকি ৫০% এমপি ও ৫০% ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। ফুল আসার সময় অবশিষ্ট ২৫% ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
পরিচর্যা
চারা রোপণের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকলে তখনই সেচ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে ১৫-২০ দিন অমত্মর সেচ দেওয়া দরকার। বর্ষার সময় কলা বাগানে যাতে পানি জমনে না পারে তার জন্য নালা থাকা আবশ্যক। মোচা আসার পূর্ব গাছের গোড়ায় কোন তেউড় রাখা উচিত নয়। মোচা আসার পর গাছপ্রতি মাত্র একটি তেউড় বাড়তে দেওয়া ভাল।
ফসল সংগ্রহ
রোপণের পর ১১-১৫ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের কলা পরিপক্ক হয়ে থাকে।
ফলন
প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ টন।
অন্যান্য পরিচর্যা
কলার পানামা রোগ দমন (Fusarium oxysporum)
এটি একটি ছত্রাক জাতীয় মারাত্মক রোগ। এ রোগের আক্রমণে প্রথমে বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রং ধারণ করে। পরবর্তীতে পাতা বোটার কাছে ভেঙ্গে গাছের চতুর্দিকে ঝুলে থাকে এবং মরে যায়। কিন্তু সবচেয়ে কচি পাতাটি গাছের মাথায় খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে গাছ মরে যায়। কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বি ভাবে ফেটেও যায়। অভ্যন্তরিণ লক্ষণ হিসেবে ভাসকুলার বান্ডেল হলদে-বাদামি রং ধারণ করে।
প্রতিকার
1. আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
2. আক্রান্ত গাছের তেউড় চারা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
কলার বানচি-টপ ভাইরাস রোগ দমন
এ রোগের আক্রমণে গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতা আকারে খাটো, অপ্রশস্থ এবং উপরের দিকে খাড়া থাকে। কচি পাতার কিনারা উপরের দিকে বাঁকানো এবং সামন্য হলুদ রংয়ের হয়। অনেক সময় পাতার মধ্য শিরা ও বোটায় ঘন সবুজ দাগ দেখা যায়। পাতার শিরার ঘন সবুজ দাগ পড়ে।
প্রতিকার
1. আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে ফেলতে হবে।
2. গাছ উঠানোর আগে জীবণু বহনকালী ‘জাব পোকা’ ও থ্রিপস’ কীটনাশক ঔষধ দ্বারা দমন করতে হবে। সুস্থ গাছেও কীটনাশক ঔষধ (সেভিন) স্প্রে করতে হবে।
কলার সিগাটোকা রোগ দমন
এ রোগের আক্রমণে প্রাথমিকভাবে ৩য় বা ৪র্থ পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। ক্রমশ দাগগুলো বড় হয় ও বাদামি রং দারণ করে। এভাবে একাধিক দাগ মিলে বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং তখন পাতা পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়।
প্রতিকার
1. আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়ে ফেলতে হবে।
2. প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি অথবা ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে।
কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা
কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা কলার কচি পাতায় হাটাহাটি করে এবং সবুজ অংশ নষ্ট করে। ফলে সেখানে অসংখ্য দাগের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত আক্রমণে গাছ দুর্বল হয়ে যায়। কলা বের হওয়ার সময় হলে পোকা মোচার মধ্যে ঢুকে কচি কলার উপর হাটাহাটি করে এবং রস চুষে খায়। ফলে কলার গায়ে দাগ হয়। এসব দাগের কারণে কলার বাজার মূল্য কমে যায়।
প্রতিকার
1. পোকা-আক্রান্ত মাঠে বার বার কলা চাষ করা যাবে না।
2. কলার মোচা বের হওয়ার সময় ছিদ্রবিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে এ পোকর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
3. প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডবিস্নউ পি মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ বার গাছের পাতার উপরে ছিটাতে হবে। ম্যালথিয়ন বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি বা লিবাসিড ৫০ ইসি ২ মিলি হারে ব্যবহার করতে হবে।
উত্তর সমূহ