কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তির
ব্যবহারঃ আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান
মোঃ আনিসুজ্জামান খান,
উপজেলা কৃষি অফিসার, মুজিবনগর,
মেহেরপুর
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের
মোট জনশক্তির সিংহভাগই কৃষি পেশায় নিয়োজিত। বাংলাদেশের
অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। তাই
দেশের উন্নয়নের সাথে এই সেক্টরের
রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এই
উপলব্ধি থেকে কৃষি বান্ধব
আওয়ামীলীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে
তখনই তারা কৃষি উপর
সর্বোচ্চ অগ্রাদিকার দিয়েছে যাতে করে বাংলার
সহজ সরল মেহনতি কৃষক
খাটি সোনার চাইতে খাটি এ দেশের
মাটিতে সোনার ফসল ফলাতে পারে। আওয়ামী
লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি
থেকে কৃষির উন্নয়নে এখন সারাবিশ্বের রোল
মডেল। আজকের
এই অবস্থানে পৌঁছাতে মূল ভূমিকা রেখেছে
সরকারের কৃষি বান্ধব নীতি,
কৃষি ভিত্তিক গবেষণা ও নিত্য নতুন
উদ্ভাবন, কৃষিবিদ ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের
কৃষকদের প্রতি সুপরিকল্পিত দিক নির্দেশনা ও
প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং কৃষকদের অক্লান্ত
পরিশ্রম।
১৯৯৬ সালে সরকার
গঠনের পর আওয়ামী লীগ
কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং সুসংগঠিত করার
ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। ফলে
মাত্র ৪ বছরের মধ্যে
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। আওয়ামী
লীগ বাংলাদেশকে ২০০১ সালে খাদ্যে
স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, তবে ২
বছরের মধ্যেই সে বাংলাদেশ আবার
খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে
খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ২ কোটি
৮০ লাখ মেট্রিক টন;
২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা
প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক
টনে উন্নীত হয়েছে। বর্ধিত
জনসংখ্যার চাপ সামলে আজ
আমরা আবার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা
অর্জন করেছি।
২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ
নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিজয়ী হয়ে ২০০৯ সালের
শুরুতে কৃষক এর দুরবস্থা
বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়
যে, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত কৃষি শ্রমিক কমে
যাচ্ছে। যে
কারণে ভরা মৌসুমে নিয়মিতভাবেই
কৃষি শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে
করে আমাদের ফসল উৎপাদন করতে
কৃষকদের খুব কষ্ট করতে
হচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন
ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ফসলের দাম কম হওয়ায়
কৃষক পরিশ্রমের তুলনায় তেমন লাভবান হতে
পারছে না। সেই
সাথে কৃষকদের প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ যথা:
সার, বীজ ইত্যাদি ছিল
নাগালের বাইরে।
সরকার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন
এর সামর্থ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত
ফসলের নতুন নতুন বীজ
মাল্টিপ্লাই করে কৃষকদের মাঝে
গুণগত বীজ পৌঁছে দেয়। কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মাধ্যমে এই
উদ্ভাবিত জাতের প্রচার ও প্রসারে কৃষক
ফসলের উদ্ভাবিত জাত, ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি,
সুষম সার ও পরিকল্পিত
সেচের মাধ্যমে কৃষক একদিকে যেমন
ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধি
পেয়েছে, অন্যদিকে সুষম সার ও
পরিকল্পিত সেচের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমে যাওয়ায়
কৃষক লাভবান হয়েছে।আওয়ামী
লীগ সরকার খামার যান্ত্রিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে
কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সমতল ভূমিতে ৫০%
ও হাওর অঞ্চলে ৭০%
ভর্তূকির মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিপ্লব
ঘটায় যার ফলে কৃষিতে
লাঙ্গলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর দ্বারা
প্রতিস্থাপিত হয়। এ
বছরের (২০১৯) শুরুতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কৃষিবিদ ড. মোঃ আব্দুর
রাজ্জাক কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরেই কৃষি যান্ত্রিকীকরণের
জন্য ৩০০০ কোটি টাকার
মেগা প্রকল্পের ঘোষণা দেয়। এর
ফলে সরকার রাইস ট্রান্সপ্লানটার ( রোপণ যন্ত্র),
রিপার (কর্তন যন্ত্র) ও কম্বাইন হারভেস্টার
( কর্তন ও মাড়াইযন্ত্র) ভর্তূকি
মূল্যে (৫০-৭০%) কৃষকের
কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে ফসলের উৎপাদন
ব্যয় কম হবে কারণ
ভরা মৌসুমে শ্রমিকের প্রয়োজন অনেকাংশে কমে যাবে; সেই
সাথে আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদের ফলে ফসলের উৎপাদন
বৃদ্ধি পাবে।
ডাল, তেল, মসলা
ও ভুট্টাসহ ২৪টি ফসল উৎপাদনে
৪% সুদে বিশেষ কৃষিঋণ
চালু করা হয়েছে।
কীটনাশকের ব্যবহারকে কমিয়ে আনা হয়েছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
ইতোমধ্যেই নিরাপদ ফসলের উপর সরকার সর্বোচ্চ
গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি
উপজেলায় ২টি করে নিরাপদ
সব্জি গ্রাম ও ১ টি
করে নিরাপদ ফল গ্রামের উদ্যোগ
নেয়া হয়েছে। এসব
গ্রামে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, ব্যাগিং প্রযুক্তি, জৈব বালাইনাশক, ট্রাইকোকম্পোস্ট
ইত্যাদি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
জনপ্রিয় করার জোর প্রচেষ্টা
চলছে।মাটি,
জলবায়ু ও এলাকা উপযোগী
ফসল নির্বাচন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির
জন্য ‘ক্রপ জোনিং ম্যাপ’
প্রণয়ন করা হয়েছে।
শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি করে ২-৩
ফসলের পরিবর্তে বছরে ক্ষেত্রবিশেষ সর্বোচ্চ
৪-৫ টি ফসল
উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। মাছ,
মাংসে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ, ডিমেও
স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে এবং অল্পসময়ের মধ্যে
দৃধ উৎপাদনেও দেশের চাহিদা পূলণ করতে সক্ষম
হবে। সামগ্রিকভাবে
আমাদের কৃষির নিবিড়তা এখন ১৯৫%।
বর্তমানে বাংলার কৃষি এখন বিশ্ব
প্রাঙ্গনেও জায়গা করে নিয়েছে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে ধান
উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ, গম
উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২ গুণ, সবজি
উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ ও
ভুট্টা উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।
বাংলাদেশ ফসলের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে,
পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়,
বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বে
চতুর্থ অবস্থানে, মাছ উৎপাদনে তৃতীয়,
ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ, রসুন উৎপাদনে ষষ্ঠ,
আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু ও পেয়ারা
উৎপাদনে অষ্টম এবং সামগ্রিক খাদ্য
শস্য উৎপাদনে ১০ম ।
২০০৮ সালে আওয়ামী
লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণা দিলে দেশির বেশিরভাগ
জনগণই এটাকে উচ্চাভিলাষী রূপকল্প ধরে নিয়েছিলেন কিন্তু
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব আহমেদ
ওয়াজেদ এর মেধা ও
প্রজ্ঞার প্রতিফলনে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা।
২৯ এপ্রিল ২০১৪ সালে মৃত্তিকা
সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক কৃষকের জন্য ডিজিটাল সেবা
‘অনলাইন
উত্তর সমূহ